ঘুরে আসুন নিঝুম দ্বীপ





দেশের দক্ষিনাঞ্চলীয় জেলা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থিত নৈসর্গিক শোভা মন্ডিত দ্বীপাঞ্চল নিঝুম দ্বীপ। রহস্যময়ী এই নিঝুম দ্বীপ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বহির্বিশ্বের মানুষেরও ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ রয়েছে।
এর অন্যতম কারন মনোরম পরিবেশ এবং এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করার বিরল সুযোগ। ফলে এই দ্বীপটিকে নিয়ে জানার আকাংখা কৌতুহল প্রিয় ও ভ্রমন পিয়াসী মানুষের বেড়েই চলেছে দিনকে দিন। মূলত কমলার চর, চর ওসমান, চর মুয়িদ ও বল্লার চর- এই চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪ হাজার একর বিস্তৃত দ্বীপটি ১৯৫০ সালের দিকে জেগে উঠে বলে জানা গেছে। ১৯৭০ সালের আগে এখানে জনবসতি প্রায় ছিলই না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে হাতিয়ার ততকালীন সাংসদ (প্রয়াত) ও বন প্রতিমন্ত্রী আমিরুল ইসলাম কালাম এখানে বেড়াতে এসে দ্বীপটির শান্ত স্নিগ্ধ রুপে মুগ্ধ হয়ে এর নামকরন করেন নিঝুম দ্বীপ। পরে হাতিয়া, শাহবাজপুর ও রামগতির নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ দ্বীপটিতে এসে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। পাশাপাশি ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশ বনবিভাগ এখানে সুন্দরবনের আদলে উপকূলীয় বনাঞ্চল গড়ে তুলতে থাকে। বর্তমানে এই বনাঞ্চলে কেওড়া, বাইন, গেওয়া, কামড়া, পুইন্যাল, নোনা ঝাউ ইত্যাদি গাছ রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে নিঝুম দ্বীপ সফরে এসে দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করেন। দীর্ঘ একযুগ পেরিয়ে গেলেও এখানে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। বলা চলে একরকম অবহেলিতই রয়ে গেছে নিঝুম দ্বীপ। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নবঞ্চিত নিঝুম দ্বীপের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা আবার নতুন স্বপ্নের বীজ বুনছেন। সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নিঝুম দ্বীপের উন্নয়ন সাধিত হলে এখানকার জনগনের যেমন ভাগ্য পরিবর্তন হবে ঠিক তেমনি পর্যটন খাত থেকে সরকারও আয় করতে পারবে কাড়ি কাড়ি অর্থ। পাশাপাশি জীব বৈচিত্র রক্ষা পাবে, তৈরী হবে পরিবেশের ভারসাম্য।

নিঝুমদ্বীপের গহীন অরন্যে প্রায় ৭প্রজাতীর স্তন্যপায়ী প্রানী, ৩৫প্রজাতীর পাখি ও ১৬প্রজাতীর সাপ রয়েছে। আর সর্বত্র রয়েছে দৃষ্টিনন্দন চিত্রল হরিণের অবাধ পদচারনা। জানা গেছে ১৯৭৮ সালে এখানে ৪জোড়া চিত্রল হরিণ অবমুক্ত করা হয়েছিলো। গত সিডরে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এ দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৩০হাজার হরিণ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা এই দ্বীপে চিত্রল হরিণের অবাধ ছুটোছুটি সত্যিই স্বপ্নীল এক দৃশ্য- যা প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে দেশী বিদেশী পর্যটকদের। ছবির মতো সুন্দর এই দ্বীপের দক্ষিনে বৃত্তাকারে রয়েছে প্রায় ১২কিলোমিটার জুড়ে বিশাল সি-বীচ্। যেখানে বসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্বর্গীয় দৃশ্য দেখা যায়। এতো কিছুর পরও শুধুমাত্র অবকাঠামোর অভাবে পর্যটকরা ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও এখানে ব্যাপক হারে আসতে আগ্রহী হননা। মূল ভূখন্ড থেকে দ্বীপে যাতায়াত ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রতুল। রাত্রি যাপনে তেমন একটা সু-ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক অধিকার গুলো থেকে স্থানীয়রা প্রায় বঞ্চিত। সরকারের একটু সুদৃষ্টি নিঝুম দ্বীপকে দেশের সম্ভাবনাময় একটা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।

 👀  যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে দুইভাবে নিঝুম দ্বীপ আসা যায়।

সড়ক পথের রুটঃ ঢাকা-সোনাপুর(নোয়াখালী)-চেয়ারম্যান ঘাট-হাতিয়ার নলচিরা ঘাট(সী-ট্রাক বা ট্রলারে)-হাতিয়ার অপর প্রান্ত জাহাজমারা বাজার-নিঝুম দ্বীপ যাবার ঘাট(খেয়া পারাপার)-নিঝুম দ্বীপ বন্দরটিলা ঘাট-নামার বাজার।

ঢাকার সায়দাবাদ এবং কমলাপুর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। ভাড়া বাস ভেদে ২৫০- ৩৫০ টাকা। সোনাপুর নেমে আবার বাসে চেয়ারম্যান ঘাট। সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মত। ভাড়া ৬০-৮০ টাকা। চেয়াম্যান ঘাট থেকে প্রতিদিন দুপুর ২ টার দিকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সি ট্রাক। সেগুলোতে চড়ে চলে যাবেন হাতিয়া। ভাড়া নেবে চেয়ারে ১৫০ টাকা এবং ডেকে ১০০ টাকা। সময় লাগবে ১.৩০ মিনিট। আপনাকে হাতিয়ার যে ঘাটে নামিয়ে দেবে সে ঘাটের নাম ‘নলচিরা ঘাট’। নলচিরা ঘাট থেকে ‘চান্দের গাড়িতে’ যাবেন হাতিয়ার অপর প্রান্ত জাহাজমারা বাজার। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মত। ভাড়া নেবে ৮০-১০০ টাকা। জাহাজমারা বাজারে রাতে থাকবেন। এখানে থাকার জন্য তেমন ভালো হোটেল নেই। যেগুলো আছে সেখানে কষ্ট করে থাকতে হবে। ভাড়া নেবে ১০০-১২০ টাকা জনপ্রতি। সকালে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার জন্য আপনাকে ঘাটে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোন যানবাহন নেই। একটি মোটরসাইকেলে তিনজন পর্যন্ত উঠা যায়। ভাড়া জন প্রতি ৬০-৮০ টাকা। পূর্বেই দরদাম করে নেবেন। ঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। ঘাটে দাঁড়ালেই অপর পাশে দেখতে পাবেন স্বপ্নের নিঝুম দ্বিপের বনাঞ্চল। সকাল ৯ টায় নিঝুম দ্বীপ যাবার নৌকা ছাড়ে। ভাড়া ২০-৩০ টাকা। সময় লাগবে ৩০ মিনিট। নদী পার হওয়ার পথে অসংখ্য পাখি দেখতে পাবেন। নিঝুম দ্বীপে আপনাকে নামিয়ে দেবে যে ঘাটে তার নাম ‘বন্দরটিলা ঘাট’ নেমে মোটরসাইকেলে সরাসরি চলে যাবেন ‘নামার বাজার’। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। (যাতায়াত এবং ভাড়া সংক্রান্ত তথ্যগুলো মার্চ-২০১৩ সালের)

 🐬  নৌ পথেঃ ঢাকা-তমরুদ্দি(হাতিয়া)-হাতিয়া বন্দরটিলা-নিঝুম দ্বীপ বন্দরটিলা-নামার বাজার।

ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সহজ রুট সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে হাতিয়ারতমরুদ্দি। এ পথে এমভি পানামা এবং এমভি টিপু-৫ নামে দুটি লঞ্চ নিয়মিত চলাচলকরে। 📞 যোগাযোগের ফোন-০১৯২৪০০৪৬০৮ এবং ০১৭১১৩৪৮৮১৩।

ভাড়া ডাবলকেবিন ১২০০ আর সিঙ্গেল ৬৫০ টাকা। ডেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা খরচ হবে। ঢাকা থেকে ছাড়ে বিকেলে আর তমরুদ্দি থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে দুপুর সাড়েবারোটায়। আর তমরুদ্দি থেকে স্কুটারে বন্দরটিলা ঘাট খরচ হবে ৪৫০-৫৫০ টাকা।স্কুটার ছাড়া বাস এবং রিকসা করেও বন্দরটিলা ঘাটে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ৩০-৪০ টাকা, রিকসা ভাড়া ৫০-৬০ টাকা।সেখান থেকে ট্রলারে চ্যানেল পার হয়েনিঝুম দ্বিপের বন্দরটিলা । সেখান থেকে মোটরসাইকেলে নামারবাজার।

 👀  কোথায় থাকবেনঃ

নিঝুম দ্বীপে আপনাদের থাকার জন্য আদর্শ স্থান ‘নামার বাজার’। এখান থেকে আপনি খুব সহজেই মূল বনে ঢুকতে পারবেন। এছাড়া এই এলাকাটি দক্ষিণ প্রান্তে হওয়ায় আপনি সাগরের কাছাকাছি থাকতে পারবেন।

থাকার জন্য নামার বাজারের উত্তরে রয়েছে অবকাশ পর্যটনের ‘নিঝুম রির্সোট’ । এখানে ২ শয্যার কক্ষ ভাড়া ১০০০ টাকা, ৩শয্যার কক্ষ ১২০০ টাকা, ৪ শয্যার কক্ষ ১৮০০ টাকা, ৫ শয্যার ডরমিটরির ভাড়া১০০০ টাকা, ১২ শয্যার ডরমিটরি ২৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে এ রিসোর্টের বুকিং দেয়াযায়। যোগাযোগঃ অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউইস্কাটন, ঢাকা। 📞 ফোন- ৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২

এছাড়া, ‘মসজিদ বোডিং’। বাজারের উত্তর প্রান্তে মসজিদ বোডিংএ থাকলে ভাড়া পড়বে মাত্র ৬০-৮০ টাকা জন প্রতি। এখানে রুমগুলো পরিপাটিএবং সুন্দর। রয়েছে গোসলের সুব্যবস্থা। আর মসজিদের ইমামের অনুমতি নিয়ে কম দামে সুস্বাদু ডাব খেতে পারবেন।

তাছাড়া বন বিভাগেরবাংলো, জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলো, রেড-ক্রিসেন্ট ইউনিট ও সাইক্লোন সেন্টারেওথাকার ব্যবস্থা করা যায়। তবে এগুলোর জন্য পূর্বেই অনুমতি নিতে হয়।
 https://www.facebook.com/groups/bangladesh.travel/
Travel On Bangladesh
 

0 comments: